অর্শ (গেঁজ)

রোগ বিবরন :নানাবিধ কারনে অর্শ রোগ জন্মাইতে পারে। গুহ্য দ্বারে সুত্রবত কৃমি জনিত উপসর্গ এই রোগ অধিক হয়। অলস প্রকৃতির রোগী যাহারা বসিয়া বসিয়া দিন কাটায় তাহারা প্রায়ই এই পীড়ায় ভোগীতে দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও এই রোগের কারন। অর্শ রোগ প্রায়ই দুই প্রকার দেখা যায়। অন্তঃবলি। যে বলি গুহ্য দ্বারের ভিতরে থাকে তাহাকে বলে অন্তঃবলি ও বহিঃবলি। যে বলি গুহ্য দ্বারের ভিতরে থাকে তাহাকে বলি অন্তঃবলি আর গুহ্য দ্বারের বাহিরে থাকে তাহাকে বলে বহিঃবলি। অন্তঃবলি থেকে প্রায়ই রক্তস্রাব হয়। বহিঃবলি থেকে তেমন একটা রক্ত স্রাব হয় না । বংশগত কারনেও এই রোগ হইতে পারে ।

চিকিৎসা

কলিনসোনিয়া (Collinsonia) :যদি জানতে পারেন রোগীর কোষ্ঠবদ্ধ শুকনা মল অতি কষ্টে নির্গত হয়। গুহ্যদ্বার ব্যথা করে মনে হয় যেন কতগুলি কাচের টুকরা মলদ্বারে ঢুকিয়া রহিয়াছে, খোচা লাগে, রক্ত পড়ে, জ্বলে, রক্ত স্রাবীয় অর্শে ইহা মহৌষধ। ইহা ব্যবহারে বহু রোগী আরোগ্য হইয়াছে।

সেবন বিধি : শক্তি 6 বা 30 দিনে তিন বার । 200 দিনে ২ বার ।পুরাতন রোগে 1m 10m বা আরো উচ্চ শক্তি ।

ইসকিউলাস হিপ (Aesculas Hip): কোমরে ব্যথা এই ঔষধের নিত্য সহচর অর্শ গেজ রোগীর কোমরে অত্যন্ত ব্যথা রক্ত স্রাব তেমন একটা হয় না ।যদিও হয় অনেক দিন পরে অল্প ।মলদ্বারে খোচানি টাটানি ব্যথা মলদ্বারে চুলকায় জ্বলে ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x 6 বা 30 দিনে তিন মাত্রা ।পুরাতন রোগে 200 বা 1m উপকারী ।

আর্সেনিক এলব (Arsenic Alb):অস্থিরতা খিট খিটে স্বভাব শীত কাতর রোগীদের মলদ্বারে অত্যন্ত জ্বালা ও বেদনা ছটফট করে ।সে জ্বালা ও বেদনা গরমে আরাম গরম সেকে আরাম হইলে আর্সেনিক অব্যর্থ ।আমি এক সময় একটি রোগী পাইয়াছিলাম গুহ্যদ্বারের জ্বালায় ও বেদনায় রোগী অস্থির ।চুলায় গরম মাটিতে গুহ্যদ্বারে লাগাইয়া সেক লইলে আরাম পাইত জানিয়া আমি তাহাকে আর্সেনিক 200 শক্তি 20 নং গ্লোবিউস 2 টি অর্ধ আউন্স ডিস্টিল ওয়াটের মিশাইয়া সেবন করিতে দেই ।দুই দিন পর সংবাদ পাইলাম রোগী ভাল আছে ।

এসিড সালফ (Acid Sulps): কাজে কর্মে অত্যন্ত ব্যস্ত সব কাজে তাড়াতাড়ি করে ।এই ধাতুর রোগীদের যদি জানিতে পারেন যে অর্শ বড় হইয়া মলদ্বারে বন্ধ হইয়া গিয়াছে ।গন্ধহীন রসে কাপড় ভিজিয়া যায় গুহ্যদ্বার জ্বলে ।এসিড সালফ দিবেন উপকার হইবে ।

সেবন বিধি :শক্তি 6 30 প্রত্যহ ৩ মাত্রা ।পুরাতন রোগে 200 1m ।

মেডিারিনাম (Medorrhinum): অর্শ গেজ বা ভগন্দর পীড়ায় মলদ্বার হইতে মাংস ধোয়া মত দুর্গন্ধ রস ঝরিলে মেডোরিনাম অব্যর্থ ।

সেবন বিধি :শক্তি 200 বা 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা ।পুরাতন রোগে 10m 50m বা cm অধিক উপকারী ।

এসিড নাইট (Acid Nit):খিট খিটে স্বভাব শীত কাতর প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবনতা রোগীদের পায়খানা নরম বা শক্ত যাহাই হোক পায়খানার সময় ও পরে মলদ্বারে অত্যন্ত জোলা ।মলদ্বারে কতগুলি সুচ বা আলপিন ফোটানো খোচা লাগে এইরুপ অনুভবে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 6 30 দিন তিন বার ।200 শক্তি দিনে ২ বার ।পুরাতন রোগে 1m 10m আরো উচ্চ শক্তি ।

এসিড মিউর (Acid Mur): মেজাজ খিট খিটে সামান্য কারনে রাগিয়া উঠে শীত কাতর ।এই ধাতুর রোগীদের জিজ্ঞাসায় জানিতে পারিলেন অর্শে টাটানি ব্যথা কাপড়ের ঘর্ষন লাগিলেও কষ্ঠ ।গরম জলে বা সেকে কিঞ্চত উপশম রোধ করে ।ঠান্ডা জলে যন্ত্রনা বাড়ে ।এসিড মিউর ব্যবস্থা করিবেন উপকারী হইবে ।

সেবন বিধি :শক্তি 30 বা 200 সকাল বিকাল ২ বার ।

এলো (Aloe): অলস প্রকৃতির দৈহিক বা মানসিক পরিশ্রমে অনিচ্ছা অল্প পরিশ্রম ক্লান্ত গরম কাতর পায়খানায় বসিয়া রেগ দিলে অর্শের বলী আঙ্গুরের থোকার মত বাহির হইয়া পড়ে ।গুহ্যদ্বার চুলকার জ্বলে ।সেই জ্বালা ঠান্ডা জলে আরাম বোধ করে ।ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 6 30 ৩ বার ।পুরাতন রোগে 200 বা 1m ।

মিলিফোলিয়ম (Millefolium): যন্ত্রনাবিহীন অর্শ রোগ গুহ্যদ্বার হইতে টক টকে লাল রক্ত স্রাবে ইহা অব্যস্থ ।

সেবন বিধি : শক্তি Q ৩/৪ ফোটা অর্ধ ছটাক জলের সহিত প্রত্যহ ৩/৪ বার ।

ব্লমিয়া অডোরেটা (Blumia Odorata): ইহা আমাদের বাংলাদেশী ঔষধ ।রক্ত স্রাবীয় অর্শে একটি মহৎ একটি মহৎ কাযকারী ঐষধ ।সেবন বিধি : শক্তি Q 3/4 ফোটা অর্ধ ছটাক জলসহ দিনে ৩/৪ বার কিছু দিন সেবন করিতে হয় ।

এমোন কার্ব (Ammon Carb): ইহা রক্ত স্রাবীয় অর্শে একটি চমৎকার ঔষুধ শুকনা মল গাট হইয়া অতি কষ্টে নির্গত হয় ।রক্ত পরে মলদ্বার চুলকায় মল ত্যাগের সময় অর্শ বলি বাহির হইয়া পড়ে ব্যথা করে ।

সেবন বিধি : শক্তি 30 বা 200 দিনে ২ বার ।

নাক্স ভমিকা (Nux Vom): সালফার নানা প্রকার অর্শ রোগের এই ঔষুধ দুইটি ব্যবহার হইয়া আসিতেছে ।সকালে সালফার শক্তি 30 এক মাত্রা ।সন্ধ্যায় নাক্স শক্তি 30 এক মাত্রা ।এই ভাবে কিছু দিন সেবন করার পর উক্ত নিয়মে 200 শক্তি সেবন করিলে অর্শ রোগে উপকার হয় ।ডাঃ কালির মতে সালফার 1m 10m প্রাতে এক মাত্রা সেবনে অর্শ রোগে অব্যর্থ ফল হয় ।

বাইওকেমিক চিকিৎসা

ক্যালকেরিয়া ফ্লোর (Calcarea Fluor): সর্ব প্রকার অর্শ রোগে এই ঔষধ কাযকারী রক্ত স্রাবীয় অর্শ ফেরাম ফসের সহিত উক্ত ঔষধ ক্রমে সেবন করিলে উওম ফল পাওয়া যায় ।

সেবন বিধি : শক্তি 6x ২-৪ বড়ি এক মাত্রা বয়স অনুপাতে দিনে ৩/৪ বার।

ম্যাগনেসিয়া ফস (Magnesia Phos):অর্শ রোগীর মলদ্বারের ব্যথায় ইহা উওম কাযকারী ঔষধ ।সেবন বিধি : শক্তি 6x বা 3x ২-৪ বড়ি কয়েক মাত্রা বয়স অনুপাতে গরম জলসহ পুনঃ পুঃ কয়েক মাত্রা সেবনই যন্ত্রনা উপশম হয় ।লক্ষন অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সঙ্গে বাইওকেমিক ঔষধ পর্যায়েক্রমে সেবন আরো দ্রুত উপকার হয় ।

পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা

অর্শরোগ আরোগ্য করিতে হইলে ঔষধ ব্যবহারে সঙ্গে নিয়ম নীতি পালন করিতে হইবে কোষ্ঠ যাহাতে পরিস্কার থাকে বিষয়ে চেষ্টা রাখিবে শীতল জলে স্থান ভাল সকাল বিকাল খোলা বাতাসে ভ্রমন করা হিত কর। পাকা বা কাচা বেল পোড়া সরবত সাগু ভিজাইয়া চিনিসহ সেবন প্রত্যহ বেশী করিয়া জল পান করা পুরাতন সরু চাউলের অল্প জীবিত মাছের সুপত্য। মাংস ডিম গরম মসলা চা কফি মদ্যপান বর্জনীয় । ক্যালকেরিয়া ফ্লোর : 1x বা 2x বিচুর্ণ এক ভাগ তিন ভাগ ভ্যাসিলিনের সাথে মিশ্রিত করিয়া অর্শ বলিতে বাহ্যিক প্রয়োগ উপকার হয় গুহ্যাদ্বারে জ্বালা যন্ত্রনা থাকিলে ইসকিউলাস হিপ Q এক ভাগ তিন ভাগ ভ্যাসিলিনের সাথৈ মিশ্রিত করিয়া বাহ্যিক ব্যবহারে উপকার হয় । রোগী বিবরন : মোঃ সহিদ উল্ল্যাহ বয়স ৪৫ বৎসর ।ফর্সা গোল চেহারা অলস প্রুকৃতি ব্যাক্তি প্রায় ১০ বৎসর অর্শ রোগে ভোগিতেছে ।মনে হয় মলদ্বারের ভিতর কতগুলো কাচের টুকরা বিদ্ধ হইতেছে ।মলদ্বারে সুচ ফোটানো যন্ত্রনা টাটানি ব্যথা জ্বালা তার উপর কোমর ব্যাথা নিত্য সহচর ।মলদ্বারে চুলকানি কোষ্ঠবদ্ধ ইসকিউলাস হিপ 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা ।দশ দিন পর সংবাদ পাইলাম বিশেষ কোন উপকার না হওয়ায় 10m শক্তি ২ টি গ্লোবাউলস অর্ধ আউন্স ডিষ্টিল ওয়াটের করিয়া সকালে খালি পেটে সেবন করিতে দেই ।পনের দিনের ফাইনাম দিয়া বিদায় করি ।পরবর্থী সংবাদ রোগী অনেকটা সুস্থ্য ।পুনরায় পনের দিনের ফাইনাম দিনের দেই তাহাতেই রোগী সুস্থ্য হয় ।

অজীর্ণ (বদ হজম)

রোগ বিবরন : অনিয়মিত বা অতিরিক্ত ভোজন তৈলাক্ত চর্বিযু্ক্ত আহারাদি ভক্ষন রাত্রি জাগরন অতিরিক্ত চা কফি মদ্য পান ধুমপান শুরুপাক দ্রবাদি ভোজন ইত্যাদি কারন বশতঃ খাদ্য ভাল রুপে পরিপাক না হইয়া অজীর্ণ রোগ জন্মায় ।ক্ষুধা লোপ কিংবা রাক্ষুসে ক্ষুধা গরম মসলা যুক্ত দ্রব্যাদি আহারের ইচ্ছা বুক গলা জ্বালা, অম্ল উদগার, আহারান্তে পেট বেদনা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি লক্ষন দেখা দেয়।

চিকিৎসা

নাক্স ভমিকা (Nux Vomica): হিংসুটে স্বভাব ভীষন রাগী, কলহপ্রিয়, শীত কাতর, মদ্যপায়ী, নেশাখোর, অতিরিক্ত রাত্র জাগরন, অধিক মসলাযুক্ত খাদ্য গুরুপাক দ্রব্যাদি ভোজন বা অধিক ভোজন জনিত অজীর্ণ। খাদ্য দ্রব্য ভালরুপে পরিপাক না হইয়া আহারের দুই এক ঘন্টা পরে পেট ব্যথা মুখে টক জল উঠে। ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x বা 6 তিন চার ফোটা সামান্য জলসহ দিনে তিন চার বার। পুরাতন রোগে 200 বা 1m দুই চার মাত্রা।

কার্বোভেজ (Corbo Veg) : কোন প্রকার কঠিন অসুখে রোগী পাখার বাতাস চায়। মুক্ত হাওয়ার জন্য আকাঙ্খা। অন্ধকারে ভুতের ভয়, স্মৃতি শক্তি হ্রাস, শীত কাতর, এই ঋতুর রোগীদের কার্বোভেজ একটি মহৎ উপকারি ঔষুধ। খাদ্য দ্রব্য ভালরুপ পরিপাক না হইয়া পেট ফাপে বিশেষ করে নীচের পেট দুর্গন্ধ বাতকর্ম বা টেকুর উঠিলে আরামবোধ ইত্যাদি লক্ষনে 30 বা 200 শক্তি 3 ঘন্টা অন্তর কয়েক মাত্রা সেবন করিলে উক্ত রোগ আরোগ্য হয় ।নাক্স প্রয়োগের পর অজীর্ণ পীড়া সম্পূর্ণ আরোগ্য না হইলে কার্বোভেজ 200 বা 1m 2/3 মাত্রা।

লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium): রোগী অতিশয় কৃপন, ভিরু, একা থাকিতে ভয়, মেজাজ রাগী, নতুন লোকের আগমনে ভয়, মনের আলন্দে ক্রন্দন, গরম খাবার পছন্দ, গরমে কাতর, অজীর্ণ পীড়ায় বেশ ক্ষুধা হয়। সামান্য আহারে মনে হয় পেট ভরিয়া গিয়োছে। কোষ্ঠ বদ্ধ মাঝে মাঝে তরল মলের সঙ্গে কঠিন (শক্ত) মল দেখা যায়। পেট ফাঁপে, টক ঢেকুর উঠে, ভুট-ভাট করে পেট ডাকে। বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৮ টার মধ্যে রোগের বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষনে 3 বা 6 শক্তি দিনে তিন মাত্রা 30 বা 200 শক্তি দিনে দুই মাত্রা পুরাতন রোগে 1m 10m বা আরো উচ্চ শক্তি ।

নেট্রাম কার্ব (Natrum Carb) : গোলমাল পছন্দ করে না, গান বাজনা নিতান্ত অপছন্দনীয়। শীত কাতর দুধ খাইলে অজীর্ণ বা উদরাময় সর্বদা পেট ভার বোধ বায়ূ সঞ্চয় হইয়া পেট ফোলিয়া উঠে। কখনো কোষ্ঠবদ্ধ কখনো টক গন্ধযুক্ত তরল মল শাক সবজি পানাহারে রোগ বৃদ্ধি ।

সেবন বিধি : শক্তি 6 বা 30 দিনে ৩ মাত্রা। পুরাতন রোগে 200 বা 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা ।

ইপিকাক (Ipecac) : ঘূত পক্ক পোলাও, মাংস, অধিক মিষ্টি বা মিষ্টান্ন, গুরুপাক দ্রব্যাদি আহার করিয়া পেট বেদনা, পাতলা পায়খানা, বমি ও বমি বমি ভাব হইলে ইপিকাক উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x 3/4 ফোঁটা সামান্য জলের সঙ্গে দুই ঘন্টা অন্তর ।

পালসেটিলা (Prlsatilla) : শান্ত স্বভাব কোমল মন অভিমানী অল্প কথায় মনে ব্যথা গরম কাতর মুক্ত বাতাস পছন্দ করে। এই ধাতু রোগীদের উহা অধিক উপকারী। চর্বি যুক্ত মাংস, ঘৃত পক্ক পোলাও অধিক মিষ্টি বা মিষ্টান্ন ভোজন জনিত অজীর্ন বা উদরামর পেট বেদনায় পালসেটিলা অমোঘ ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x চার ফোঁটা সামান্য ঠান্ডা জলের সাথে ২ ঘন্টা অন্তর ।

ম্যাগনেসিয়া কার্ব (Magnesia Carb) : খিটখিটে স্বভাব, বদ মেজাজী, শীত কাতর, মাংস খাবার অত্যন্ত পছন্দনীয়। এই ধাতুর রোগীতে ইহা অধিক কার্যকরী। দুগ্ধ পান অসহ্য, পেট ফাঁপে বুক জ্বলে টক ঢেকুর উঠে, মুখে টক আস্বাদ রুটি, আলু, দুধ খাইলে পেটে বায়ু জমে, শূল ব্যাথা হয়। প্রভৃতি লক্ষনে ইহা উপকারী ।

সেবন বিধি : শক্তি 30 বা 200 দিনে 2 বার ।

চায়না (China) : সমস্ত পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানার সাথে অজীর্ণ খাদ্য নির্গত হয় । ফল খাইলে পেটের অসুখ বাড়ে। অথবা ফল খাইয়া অজীর্ণ বা উদরাময়। রোগী দিন দিন দুর্বল হইতে থাকে। খাদ্য দ্রব্য হজম না হইয়া আস্ত বা অর্ধ ভাঙ্গা নির্গত হয়। ইহাতে চায়না অব্যর্থ ।

সেবন বিধি : শক্তি 3x বা 6 ৩/৪ ফোটা সামান্য জলের সহিত ৩ ঘন্টা অন্তর 30 বা 200 শক্তি উপকারী।

ক্যারিকা পেঁপেয়া (Carreca Papaya) : যাহাদের হজম শক্তি দুর্বল মাংস, ডিম, গুরুপাক দ্রব্যাদি এমন কি সামান্য দুধও হজম করিতে পরে না। অল্প অল্প করিয়া দিনে রাত্রে কয়েকবার পায়খানায় যায়। অজীর্ণ তরল মল। চক্ষু হলদে জিহ্বায় হলদে ময়লা রক্ত স্বল্প দুর্বল পেট ফোলা, দুগ্ধ খাইলে অজীর্ণ বা উদরাময় দেখা দেয় ।

সেবন বিধি : শক্তি Q ৮/১০ ফোটা সামান্য জলসহ আহারে পর শিশুদের অর্ধ মাত্রা। 3x ব্যাবহারে ও উপকার পাইয়াছি ।

সালফার (Sulphur) : খিট খিটে স্বভাব অল্পতে উত্তেজিত হইয়া উঠে। অত্যন্ত স্বার্থপর, গরমে কাতর, অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন রোগী যাহারা প্রায়ই নানাবিধ চর্ম পীড়ায় ভোগে। পায়ের তলায় জ্বালা শরীরে দুর্গন্ধ ঘাম। রুটি, আলু, ঘৃত প্রভৃতি দ্রব্য আহার করিলেই পেট ফাঁপে টক ঢেকুর উঠে। গন্ধকের বর্ণ পায়খানা বাতকর্মে ভীষন দুর্গন্ধ এই প্রকৃতির রোগীদের নতুন বা পুরাতন অজীর্ণ পীড়ায় ইহা অব্যর্থ ।

সেবন বিধি : শক্তি 30 বা 200 দিনে 2 বার। পুরাতন রোগে 1m বা 10m সকাল 2 মাত্রা ।

বাইওকেমিক চিকিৎসা

নেট্রাম ফস (Natrum Phos) : টক ঢেকুর উঠে, বুক জ্বলে, মুখে টক জল উঠে। হরিদ্রা বর্ণের জিহ্বা আহারের পার পেট বেদনা। অম্ল গন্ধযুক্ত বাহ্যে মাঝে মাঝে অম্ল বমন ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী। লক্ষন অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ঔষুধের সঙ্গে বাইওকেমিক ঔষধ পর্যায়ক্রমে সেবনে আরো অধিক উপকার হয়।

সেবন বিধি : শক্তি 6x বা 12x ১-৪ বড়ি একমাত্রা (বয়স অনুসারে) প্রত্যহ ৩ বার ।

নেট্রাম মিউর (Natrum Mur) : অত্যাধিক লবন প্রিয়, তিক্ত ঝাল খাইবার প্রবল ইচ্ছা। রুটি খাইতে অনিচ্ছা, রুটি খাইলে অজীর্ন পীড়া দেখা দেয়। মুখে জল উঠে, মাথা ধরে, অতিশয় জল পিপাসা ইত্যাদি লক্ষনে ইহা মহৎ কার্যকারী ঔষুধ ।

সেবন বিধি : শক্তি 6x বা 12x ২-৪ বড়ি একমাত্রা (বয়স অনুসারে) প্রত্যহ ৩ বার ।

ক্যালকেরিয়া ফস (Calearea Phos) : রক্ত হীন দুর্বল জীর্ণ শীর্ণ রোগীদের হজম শক্তির দুর্বলতা, আহারে অনিচ্ছা, উদরে বায়ু জমে ইত্যাদি লক্ষনে বা অন্য ঔষুধের সহিত পর্যায়ক্রমে ইহা সেবন অজীর্ণ পীড়া আরোগ্য হয়।

সেবন বিধি : শক্তি 3x বা 6x ২-৪ বড়ি একমাত্রা (বয়স অনুপাতে ) ৩ঘন্টা অন্তর ।

ক্যালি মিউর (Kali Mur) : ঘৃত পক্ক বা অধিক তৈলাক্ত খাদ্য দ্রব্য আহার জনিত অজীর্ণ পীড়া তৈলাক্ত উদগার উঠে, জিহ্বা সাদা বর্ণের প্রলেপ যুক্ত রোগীদের ইহা অধিক উপযোগী ।

সেবন বিধি : শক্তি 6x ২-৪ বড়ি একমাত্রা (বয়স অনুপাতে) ৩ ঘন্টা অন্তর । পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা নিয়মিত আহার করা বিধেয়। ভাল ভাবে চর্বন করিয়া আহার করা উচিত। সকাল সন্ধ্যায় সাধ্যমত ব্যায়াম করা ভাল। পুরাতন সরু চাউলের অন্ন, জীবিত শিং বা মাগুর মাছের ঝোল কাঁচা কলা, কাঁচা পেঁপে সুপথ্য। গুরুপাক দ্রব্যাদি ভোজন নিষিদ্ধ ।

রোগী বিবরন : আলেয়া নামে (৩২) এক মহিলা প্রায় নয় দশ মাস যাবৎ অজীর্ণ পীড়ায় ভোগে। এই বদরাগী মহিলা এলোপ্যাথিক ও কবিরাজী চিকিৎসা করে ব্যার্থ হয়ে অবশেষে আমার নিকট চিকিৎসার জন্য আসে। পাঁচ-ছয় ঘন্টা পর পর পায়খানায় যায়। কিন্ত পায়খানা পরিস্কার হয় না। আহারের কিছু পর চিনে চিনে পেট ব্যথা। দিনে রাত্রে চার-পাঁচ বার পায়খানার যায়। মাঝে মাঝে নিস্ফল পায়খানা। দিন দিন শরীর দুর্বল হইতে থাকে। নাক্স 1m দুই মাত্রা বিকালে ও রাত্রে সেবন করিতে দেওয়ায় তিনি এক মাস ভাল থাকার পর পুনরায় উক্ত পীড়ায় আক্রান্ত হওয়াতে নাক্স 10m উক্ত নিয়মে সেবন করায় তিনি আরোগ্য লাভ করেন।